22
সুজাতার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ডিসি হিলে। সেই ২০১১ সালে। আমরা দুজন দুই ভার্সিটিতে পড়লেও মিউচুয়াল ফ্রেন্ড মুন্নার মাধ্যমে পরিচয়। মুন্না, রিয়া, সুজাতা, রবিন সহ বিশাল এক সার্কেল ছিলো আমাদের শুধুমাত্র আড্ডাবাজির জন্য।
শরীফ মাঝে মাঝে আসতো গিটার নিয়ে। ছেলেটা ভালোই বাজায়। গিটার থাকলে ধুমসে গান হতো একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর হতো ট্রুথ ও ডেয়ার নামে ছেলেমানুসি এক খেলা। অন্তত আমার কাছে এইটা ছেলেমানুসি মনে হতো। সন্ধ্যার পরেও পোলাপান বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে আড্ডা দিতো। আমি দেরী করতাম না। ঘরে আম্মা একলা থাকে।
ঘরে তাড়াতাড়ি ফেরা সহ বেশ কিছু কারণে আমাকে "লুতুপুতু" ডাকা হতো। যা আমি চরম মাত্রায় হেইট করতাম। কিন্তু কি আর করা। বন্ধু বান্ধব যা তা বলতেই পারে। চুপসে গিয়ে হজম করতে হত।
তবে সবার চাইতে এক কাঠি বাড়া ছিলো সুজাতা। মায়াময় মুখ (সবার চোখে সুন্দরী), কিন্তু যারা আমরা চিনতাম পারত পক্ষে সুজাতার সাথে কেউ লাগতে যেতাম না। কারণ এই মেয়ে প্রচন্ড ঠোঁটকাটা। ঠোঁটকাটা শুধু বললে ভুল হবে। বলা যায় এই মেয়ে ঠোঁটই নেই। কথা দিয়ে কারো শরীর জ্বালিয়ে দেয়ার উপর প্রাইজ থাকলে এই মেয়ে নির্ঘাত নোবেল পেতো।
যাই হোক, সময়টা ছিলো মে মাস। এই মাসে বৃষ্টির কোন মা বাপ নেই। ধুম করে এসে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অলিখা মসজিদের সামনে থেকে চকবাজার মোড়,, এই পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেতেই কাউয়াভেজা হয়ে গেলাম চোখের পলকে। চুলের জেল নিয়েছিলাম, দোকানদার হাসিমুখে আশ্বাস দিয়েছিলো, মামা এইটা ওয়াটারপ্রুফ জেল। পানিতে লাগলেও কিচ্ছু হবেনা। সেই ওয়াটারপ্রুফ জেল, জেলি ফিসের জেলির মত পুরো মুখে লেপ্টে আছে। চকবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে দোকানদারের বংশ উদ্ধার করছিলাম।
-- কিরে গাধা! এইখানে কি করিস! চেনা কণ্ঠ।
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে হয়না। সুজাতা সামনে এসে দাঁড়ায়। হাতে পিংক কালারের ব্যাগ, হাতে ম্যাচিং করা পিংক ছাতা।
-- কিছু করিনা। রিকশা খুঁজি। বাসায় যাবো। তুই এইখানে কেনো?
-- আমি এইখানে কেন মানে? আমি তো এইখানেই থাকবো। আমার ক্যাম্পাস এলাকা, আমার হল। আমি কি তোর মত লুতুপুতু নাকি? হলে থাকি বুঝছিস? একটা ভাব আছে!
-- বাসায় থাকলেই যে কেউ লুতুপুতু হয় এই কথা তোকে কে বললো। কই শিখলি এইসব কথা?
-- ঠিকই বলেছি। রাতদিন যারা বাসায় ঢুকে বসে থাকে তারা লুতুপুতু। আর তুই হইলি তাদের মধ্যে সেরা - গাধা লুতুপুতু।
একটু আগেই বলেছি, এই মেয়ের ঠোঁটই নেই। এর সাথে কথা বাড়ানো আসলেই গাধার কাজ, এই মেয়ে তিলকে তাল বানাবে, তারপর সেই তালের পিঠা সবাইকে খাওয়াবে। সুতরাং কেটে পড়াই ভালো।
-- শুন! মেলা বকবক করসস। তুই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে লুতুপুতুদের লিস্ট বানা। আমি গেলাম।
-- ক্যান! সন্ধ্যায় ফিরলে কি আম্মু বকা দিবে?
-- বকা না শুধু। কান ধরায়ে দাড়া করাই রাখবে। ... মেজাজ খারাপ করে বললাম।
-- আচ্ছা গাধা যা তাহলে, বাসায় গিয়ে সেরিলাক খা।
-- শুন! রাস্তাঘাটে সবাইকে গাধা বলে ডাকাডাকি করবিনা। ইভটিজারদের সাথে সাথে এডাম টিজারদের ও এখন সমান ভাবে সাজা হয়। তোদের মত কয়েকটা মেয়ের জন্য আইন পরিবর্তন হলো বলে!
ফিক করে হেসে ফেললো সুজাতা। যতই অপবাদ দেই, এই মেয়েকে হাসিতে ১০ এ ৯ চোখ বন্ধ করে দেয়া যায়। এই মেয়ের হাসি অসম্ভব মায়াময়। তবে সেই ফাঁদে পা দিলাম না। সে হাসছে, আর কেউ ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে। এইটা বুঝতে পারলেও সে তিলকে তাল করবে। রুমনকে একবার কি বাঁশটাই না দিলো নিজের চোখে দেখা।
বাড়ির পথ ধরলাম ওকে বিদায় দিয়ে। আকাশ গুমোট হয়ে আছে। রিকশায় বসে বসে সুজাতার কথা ভাবছিলাম। স্বাধীনচেতা একটি মেয়ে, নামের মধ্যে একটা লক্ষ্মী লক্ষ্মী ভাব আছে। কিন্ত এই মেয়ে মোটেও নম্র হয়নি। নিরা পার্লারে প্রতি মাসে কত টাকা নষ্ট করে, বা শরিফের বড় বড় চোখ দিয়ে কিভাবে টেবিল টেনিস খেলা যায়, অথবা আমি কতটা মাম্মি ড্যাডি টাইপ ছেলে এইগুলা আড্ডায় তার আলোচনার বিষয়বস্তু। এমনকি ট্রুথ ও ডেয়ার নামক খেলায় সে সবাইকে হ্যানস্তা করে ছাড়ে। তাই আমাদের সবার মধ্যে একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে, খুব বেশি দরকার না হলে সুজাতাকে ঘাটাই না আমরা।
একবার খুব সাহসী হয়ে বলেছিলাম
-- শুন সুজাতা! তুই চট্টগ্রাম বদমাশ মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান পদে দাঁড়া। আমি বিশ্বাস করি তুই তুই জিতবি, পুরো রেকর্ড ভোটে জিতবি।
-- ভালোই তো! তা একটা মার্কা লাগবে না? আমার মার্কা হবে "গাধা মার্কা" আর ব্যানারে বড় করে তোর ছবি থাকবে গাধার পরিবর্তে। বুদ্ধি কেমন? জোস না!
নগদে ইজ্জতের ফালুদা! মুখ কালো করে চুপসে যাই। এই মেয়ে কেন যে সবসময় গাধা বলে আমাকে?
কিন্তু তার এই তিড়িং বিরিং স্বভাবের পিছে যে আরেকটা মানুষ লুকিয়ে ছিলো আমি জানতাম না। অনেক পরে জানলাম। সেই জানাটা যে সবকিছু চেঞ্জ করে দেব ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।
আম্মা মেডিক্যালে ভর্তি। ২-৩ ব্যাগ রক্ত লাগবে। ছোটখাটো একটা অপারেশন, কিন্তু ডাক্তার বলেছেন আগে থেকে রক্ত রেডী করে রাখতে যেহেতু Blood type Rare. সবাইকে ফোন দিচ্ছি। হঠাত সুজাতার কথা মাথায় আসলো। সে তো চিটাগাং কলেজের হোস্টেলেই থাকে। হয়তো হেল্প করতে পারবে। বিকালেই ফোন দিলাম।
-- সুজাতা তুই কি হলে?
-- হুম! ক্যান! তুই কি এদিকে নাকি?
-- কাছাকাছি আছি। আম্মা CSCR এ ভর্তি। দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে। এক ব্যাগ পেয়েছি। আরেক ব্যাগ হলে ভালো হয়। তোর হলে একটু দেখবি 'বি পজেটিভ' রক্ত পাস কিনা।
-- বলিস কি! আমি নিজেই তো বি পজেটিভ। কখন আসতে হবে বল। আমি এসে দিয়ে যাচ্ছি। তোর আম্মাকেও একটু দেখে যাই।
-- তুই কি রক্ত দিবি? তোর বয়স হইসে? তুই হলে দেখ, না পেলে তোরটা নিবো।
-- থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো গাধা! আমি একটু পর আসতেসি।
বরাবরের মতই কথা দিয়ে ওর সাথে পারলাম না। সুজাতাকে রিজার্ভে রেখে বাকি সব জায়গায় খবর নিতে থাকলাম। কিন্তু রক্ত লাগলে দরকারের সময় পাওয়া যায়না এইটা হলো অলিখিত নিয়ম। পুরো চট্টগ্রাম শহরে বি পজেটিভ রক্তের আকাল পরে গেলো। হয়তো গাধা বলেই মনে হয় ম্যানেজ করতে পারলাম না!
সুজাতা আসলো সাতটার একটু পরে। হসপিটালের এক এটেন্ড্যান্ট তাকে হাবিজাবি জিজ্ঞেস করে ছোট একটা রুমে নিয়ে গেলো। হাতের কব্জিতে সুই ফুটানোর আগে পর্দা সরিয়ে তাকালাম। ভাবলাম সে হয়তো ভয় পাবে, আর এমন সিন মিস করা যায়না। কিন্তু সুজাতার মুখ আর হিব্রু ভাষার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিছুই বুঝা গেলনা। স্বভাবতই সে ডাক্তার কাম এটেন্ড্যান্টের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
আমি উপরে গেলাম আম্মার কেবিনের দিকে। প্রায় ২৫ মিনিট পর ফিরে এসে দেখি সে শুয়ে আছে এক হাত ভাজ করে। আমাকে দেখে লজ্জা পেল। তাড়াতাড়ি উঠার চেস্টা করছে। পুরোই অন্যরকম অভিজ্ঞতা আমার জন্য।
-- এতক্ষণ কই ছিলি। এই ডাক্তার পুরোই বোরিং। পুরো আধ ঘন্টা পেইনের উপর গেলো। লাইন মারার চেস্টা করছিলো। বুঝ অবস্থা!
-- তুই উঠিস না। শুয়ে থাক। কিছু খাবি? দুর্বল লাগছে? দাঁড়া আমি জুস নিয়ে আসছি।
-- আরে নাহ! তুই এতক্ষণ ছিলি কই? ওয়েট করছিলাম।
অবাক হবার ভান করে বললাম -- আমার জন্য ওয়েট করছিলি?
-- ধুর! কি বলিস!... ও মনে হয় লজ্জা পেল। আসলেই আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।
-- নাহ আমি আশে পাশেই ছিলাম। তুই বুইড়া ডাক্তারের সাথে যে আলাপ জমাই দিলি, ভাবলাম ডিস্টার্ব না করি।
সুজাতা হাসলো। ঘরটায় শুধু আমি আর সুজাতা। লাল টিপ পরেছে ম্যাচিং করি। বুক ধক ধক করছে হঠাত করে। এমন ফিলিংস কোনদিন হয়নি। আড়চোখে তাকিয়ে ভাবছি ওর দিকে আরেকবার তাকাবো? ধরা খাবো না তো? লজ্জা কি ও পাচ্ছে নাকি আমি? ইতিমধ্যে কথা বলার সময় বেশ কয়েকবার আটকে গেছি। ও বুঝে গেলে সব শেষ!
কাল সবাইকে বলে বেড়াবে, তিলকে তাল বানাবে, সেই তালের পিঠা সবাইকে খাওয়াবে।
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রাণপণ চেস্টা করে যাচ্ছি।
-- তোর হলের গেট কয়টায় লাগাবে?
-- ১০টায়। আমার উঠা দরকার।
সুজাতা একগোয়াড় টাইপের। বাম হাতে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করলো। আমি চোখ বড় বড় করে দেখি তার বাম হাতের কবজি থেকে রক্ত পড়ছে। মুহূর্তে পরিবেশ পালটে গেলো। আমি জানিনা আমি চিৎকার করে ডাক্তারকে ডেকেছিলাম কিনা। ওর হাত চেপে ধরে রেখেছিলাম। আমার হাত ভিজে গেছে ওর রক্তে। ভুলটা হয়েছিলো ও হাত ভাজ করে রাখেনি বেশিক্ষণ, আর চাপ দিয়েছে, রক্ত বন্ধ হবার সুযোগ পায়নি। এইভাবে এক মিনিট ছিলো, কিন্তু এই এক মিনিট আমার কাছে মনে হয়েছে এক ঘন্টা! ডাক্তার আসাতে আমি ওর হাত ছেড়ে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ওর চোখ কি বন্ধ ছিলো তখন? একবারো ঘুরে তাকাইনি তখন।
সেই রাতে সুজাতার আর হোস্টেলে যাওয়া হয়নি। বলা যায় আমরা যেতে দেইনি। আম্মা তখন পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারে। আর সুজাতার জায়গা হলো আম্মার কেবিনে। আর কেবিনে বাইরের চেয়ারে সারারাত বসে দুইটা মানুষের জন্য টেনশন করতে করতে রাত পার করলাম আমি।
ভোরে ফুল কিনতে বের হলাম। এই বর্ষায় প্রেম প্রেম একটা ভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফুলের দোকানদারগুলো বড়ই বেরসিক এত সকালে কেউ দোকান খুলেনি। এক দোকান খোলা পেয়ে গোলাপ কিনলাম দুইটা। চাইছিলাম অবশ্য বেলী ফুল! এই কাঠখোট্টার শহরে বেলী ফুল কেউ বেঁচে না।
কেবিনে ব্যাক করে দেখি আমার বোন এসেছে দুলাভাই সহ। আমার দুলাভাইটাও আমার বোনের মত বোকা হয়েছে। মোক্ষম সময় এসে ব্যঘাত! যাই হোক অফিসের দোহাই ১০ মিনিট পর দুলাভাই বের হয়ে গেলো। আর সাথে ''মেয়েটা ভালো, দেখে রাখিস'' টাইপ একটা ইঙ্গিতপূর্ণ লুক দিয়ে গেলো। বোন গেলো আম্মার খবর নিতে।
ভালভাবেই দেখে রাখতে হবে। মনস্থির করে ফেলেছি। আড়চোখে দেখার চেস্টা করলাম। ভার্সিটিতে আড়চোখে পাশেরজনের খাতা দেখার সময় জীবনেও ধরা খাইনি। এখন ধরা খেয়ে গেলাম। খুব বাজে ভাবেই ধরা খেলাম। এখন আর চোখ সরানোর উপায় নেই।
এখন আর গত রাতের মত ''তাড়াহুড়া করে চলে যাবো'' ভাবটা নেই।
-- কিরে বেঁচে আছিস? আমি তো ভাবলাম তোকে এয়ার এম্বুলেন্স করে সিঙ্গাপুর পাঠাতে হবে।
-- তোদের অনেক কষ্ট দিলাম। (লজ্জা পাচ্ছে সে)
আবার সেই অপরিচিত ধাক্কাটা খেলাম বুকে। এমন ধাক্কার সাথে আমি পরিচিত না।
চিটাগাং কলেজ হোস্টেল পর্যন্ত রিকশা নিলাম। তার বান্ধবীদের ও আসতে না করে দিলাম। বললাম আমি দিয়ে আসবো। অনেক বার রিকশায় চড়েছি সুজাতার সাথে। এইবারের মত
অনুভূতি কখনো হয়নি। মনে হচ্ছে কাওকে খুব করে কাছে পাবার ইচ্ছা প্রাণপণে আটকাচ্ছি। সুজাতাকে স্বাভাবিক দেখে কোন কথা বললাম না। পুরো রাস্তা কথা ছাড়া আসলাম। হোস্টেলে পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে আমার কি হলো জানিনা। পকেট থেকে চাপ খাওয়া গোলাপ দুটো বের করে সুজাতার হাতে দিয়ে পাক্কা ২০ সেজেন্ড সুজাতার হাত ধরে রাখলাম। এরপর সুজাতার অবাক হওয়া চোখের সামনে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে উলটা ঘুরে হাটা শুরু করলাম। পিছে একবারও ফিরে তাকালাম না।
এরপর দুইদিন আড্ডায় যাওয়া হলোনা। প্রেস ক্লাব, ডিসি হিল, সিআরবির আড্ডা মিস করছি। ফোন সাইলেন্ট করে ফেলে রেখেছি। কাহিনী যে ঘটিয়ে ফেলেছি সেইটা ভালোভাবে অনুভব করলাম কাহিনী ঘটাবার ঘন্টাখানেক পর। শিউর এইটা অলরেডি পাড়ায় পাড়ায় রটানো হয়ে গেছে। সবার খোটার জ্বালা থেকে বাঁচতেই এডভান্স মোবাইল সাইলেন্ট!
প্রেম নিষিদ্ধ পরিবারে থেকে প্রেমে পরা আমার জন্য স্বাভাবিক। হিসাব করে দেখলাম সবার আগে প্রেমে পড়েছিলাম বাংলা সাবরিনা ম্যাডামের, স্কুলে থাকার সময়। লিস্টে সবার শেষে সুজাতার নাম।
এর মধ্যে সুজাতা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। আড্ডার প্রায় সবাই ফোন দিচ্ছে। কারো ফোন ধরছিনা। এই দুইদিন বাসায় শুধু ঘুমালাম। ছাদে বসে থাকলাম। কেনো জানি বৃষ্টিও হচ্ছেনা আর। আর শুধু মোবাইলে 'পরিণতি' নামে একটা গান শুনেছি ননস্টপ।
তৃতীয় দিন বিকালে রুমন বাইক নিয়ে এসে হেভি গালমন্দ করে নিয়ে গেলো সি আর বি। দেখি সবাই আছে অলমোস্ট আছে। সবাই যা তা শুনালো। কিন্তু অবাক হলাম কেউ ওইদিনের ব্যাপার নিয়ে কিছু বলছে না। হয়তো সুজাতা কাওকে কিছু বলেনি। এতক্ষণ একদম চুপ ছিলো সুজাতা । হঠাত বললো,
-- আজ ট্রুথ এন্ড ডেয়ার হোক। প্রথমেই আমি রেজাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। সত্যি বলতে হবে।
আমি বিষম খেলাম। আস্তে করে বললাম -- কি প্রশ্ন!?
একটু চুপ থেকে সুজাতা বললো -- তুই কি আমাকে ভালবাসিস?
আমার দম বন্ধ হয়ে গেলো। চোখে আধার দেখছিলাম মনে হয়। আধার কাটতেই দেখি সবাই আমার দিকে চোখ বড় করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি সাময়িক ধকল কাটিয়ে উঠলাম। মনে বললাম - ''এই সুযোগ রেজা! আজ তুই বাঁচবি নাহয় মরবি।''
পরিণতি গানের দুই লাইন বলে দিলাম বিড়বিড় করে -
''পরিণতি ভেবেছি একটাই,
যেভাবে হোক তোমাকে চাই!''
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, সুজাতা সহ। প্রচন্ড লজ্জায় উঠে দাঁড়ালাম। ''তোরা থাক, আমি যাই,'' বলে হাটা শুরু করলাম।
পিছ থেকে দৌড়ে এসে হাত টেনে ধরলো সুজাতা। হাসি হাসি মুখে বললো
--মোবাইল দেখ গাধা!
মোবাইল বের করে দেখি সুজাতার মেসেজ -
''এত বোকা কেনো তুমি?''
উপরের ছবিটা আমাদের কাশ্মীর ট্যুরের সময় তোলা। উপরের পুরো কাহিনী বা গল্প বিলিভ করা বা না করার দায়দায়িত্ব পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে সার্ফ এক্সেলের এডের মত করে একটা কথাই বলবো - আড্ডা থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে আড্ডাই ভালো।
Comments:
Reply:
To comment on this video please connect a HIVE account to your profile: Connect HIVE Account